নিম্নচাপের প্রভাবে খুলনায় পাঁচ ঘণ্টায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। চার বছর আগে এত বৃষ্টিপাত হয়েছিল খুলনায়। এ বৃষ্টির ফলে নোংরা পানিতে ডুবে গেছে মহানগরীর অধিকাংশ সড়ক। বাড়ির নিচতলায় প্রবেশ করেছে ড্রেন-নর্দমার নোংরা পানি। জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। সড়কে চলতে পারছে না রিকশা-ইজিবাইক। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরা। যথাসময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতেও তাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। বুধবার দিনগত মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়।
বয়রা মডেল হাই স্কুলের শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান জানায়, তার এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র বয়রার হাজী ফয়েজ উদ্দিন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। সকালে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে হাঁটু পানি ভেঙে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে। বড় ভাইয়ের সঙ্গে মোটরসাইকেলে বাসা থেকে বের হয়ে সারা রাস্তায় পানি ছিটে কাপড় নোংরা হয়েছে।
নোমানের বড় ভাই নাসিব আহসান রুমি বলেন, ‘১১টায় পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়। কিন্তু সড়ক-বাসা- বাড়ি পানিতে সয়লাব। এ কারণে ১০টায় নোমানকে নিয়ে নুরনগরের বাসা থেকে বের হই। জিপিও পার হয়েই নোংরা পানি। মোটরসাইকেল চালিয়ে কেন্দ্র পর্যন্ত যেতে দুজনেরই কাপড় নষ্ট হয়। এদিকে স্কুলের সামনে গর্ত ছিল। পানির কারণে বুঝতে না পারায় ওই গর্তে পড়ে ইজিবাইক উল্টে শিক্ষার্থীরা কাদাপানিতে ভিজে যায়। ওই অবস্থাতেই তাদের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।’
টুটপাড়া নিবাসী মনিরা রত্না বলেন, ‘রাত সাড়ে ৩টার দিকে টের পেলাম ঘরে পানি ঢুকেছে। ১৯৮৭ সালে বাড়ি তৈরি হয়। এরপর জীবনে প্রথমবার এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলাম।’
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ বলেন, ‘চার বছর পর খুলনায় কম সময়ে বেশি বৃষ্টি হলো। রাত ১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। আর বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৪৬ মিলিমিটার। নিম্নচাপের প্রভাবে এ বৃষ্টি হলো। নিম্নচাপ কেটেছে। তবে এর প্রভাব এখনও আছে। ফলে খুলনার আকাশে মেঘ দেখা যাচ্ছে। এতে দু-একবার হালকা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
সচেতন মহল বলছে, শহরের পানি নদীতে নামার খালগুলো দখল ও ভরাট রয়েছে। আর ড্রেন নির্মাণ কাজও চলছে ধীরগতিতে। ফলে বৃষ্টি হলেই নগরবাসীকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
জানা যায়, খুলনার নিরালা, মুজগুন্নী, বয়রা ও প্রান্তিকাসহ অধিকাংশ আবাসিকের বাড়িতে পানি প্রবেশ করে নিচতলা নিমজ্জিত হয়েছে। সব রাস্তায় পানি। পানি ঢুকেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। দীর্ঘদিন ধরে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে অনেক স্থানে। এ ছাড়া নগরীর পানি যাওয়ার অধিকাংশ খাল দখল করে বালি ভরাট করার কারণেও নগর জুড়ে এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলো। পানির কারণে কোনটি রাস্তা আর কোনটি জলাশয় চেনার উপায় নেই।
খুলনা সিটি করপোরেশনের সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আজিজ বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে খুলনার অধিকাংশ রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’
খুলনায় এবার ৫৮টি কেন্দ্রে অংশ নিচ্ছে ২৬ হাজার ৮ জন পরীক্ষার্থী। এ বছর খুলনা মেট্রোপলিটন এলাকার ৩৩টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।